টুরিং পুরস্কার (Turing Award)
|
চিত্রঃ কম্পিউটারের নোবেল সম্মাননা - টুরিং এওয়্যার্ড |
বুঝার জন্য ভাষার সৃষ্টি । প্রতিটা জীব জড় প্রাণী কিছু না কিছুর মাধ্যমে আমাদের বুঝিয়ে দেয় তার অবস্থার কথা । আমরা বিভিন্ন ভাষা ব্যবহার করে সমগ্র মানব জাতির সাথে মনের ভাব আদান প্রদান করি তেমনি প্রত্যেক অনড় বস্তুরও একটা ভাষা আছে । যেটা শ্রবণ করার ক্ষমতা আমাদের নেই শুধু আমরা অনুধাবন করতে পারি । যেমন, ব্যবহারযোগ্য টুথপ্যাস্ট প্লাজমাটিক লিকুইডের উপর যদি আপনি এসিডাইয়িত ইফেক্ট্যাড তরলের সংমিশ্রণ ঘটান তবে টুঠপ্যাস্ট আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না । এতে টুথপ্যাস্টের বয়ান আমরা উপলব্ধি করতে পারি । টুথপ্যাস্ট বলে দেয়, "ভাইরে এমনটা করলি কেন ? এখন আমি তো আর আমি রইলাম না ।" একটা বাঘের গর্জনে আমরা অনুধাবন করতে পারি বাঘটা খুদার্থ । একটা উদ্ভিদের উপর আঘাত করলে তার শরীর থেকে একধরণের তরল নিসৃতঃ হয়(যেটা বুঝা যায়, রক্ত পরছে) । এতে আমরা বুঝতে পারি অনড় জীবটার উপর আঘাত করায় বস্তুটা খুব কষ্ট পেয়েছে ।
মানুষ সব চাইতে উন্নত প্রাণী । তাই আমাদের রয়েছে বিশ্ব ব্যাপী প্রায় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশী ভাষা । যার মাধ্যমে আমরা কমুনিক্যাট হয় । তেমনি কম্পিউটার নামক যন্ত্রটিরও বুঝার কয়েকটা ভাষা আছে । যার মাধ্যমে সে জেনে নেয় আমি তাকে কি বুঝাতে চাচ্ছি । এই ভাষাগুলোকে "প্রোগ্রাম" বা বাঙ্গলায় "শিড়নথি" বলা হয় । আর যারা এই ভাষা বুঝে এবং তার ভাষাই তাকে প্রেষণা প্রদান করে কাজ চালায় সেটাকে বলে "প্রোগ্রামিং" ।
|
চিত্রঃ এল্যান টুরিং |
এই ব্যক্তি দিক বিজয়ী একজন প্রোগ্রামার । তিনি পৃথিবীর বুকে প্রথম তাত্ত্বিক কম্পিউটার প্রকৌশল এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা (Artificial Intelligence) এর উৎকৃষ্ট বেসিস সৃষ্টি করেন । এই ব্যক্তি একাধারে একজন অগ্রণী কম্পিউটার প্রকৌশলী, গণিতজ্ঞ, যুক্তিবিদ, দার্শনিক, গোপন সংকেত বিশেষজ্ঞ, গাণিতিক জীববিজ্ঞানী এবং ম্যারাথন দৌড়বিদ ছিলেন ।
বিজ্ঞানের প্রত্যেকটা শাখায় এই ব্যক্তির কিঞ্চিৎ সামান্য হলেও হাত আছে । তিনি ক্রিপ্টলজীতে অসামান্য উন্নয়নের কাজ করেন ।
১৯৩৬ সালে তিনি তার জীবনের সবচেয়ে বৃহৎ গবেষণা পত্রটি প্রকাশ করেন । যার নাম ছিলো ""On Computable Numbers, with an Application to the
Entscheidungsproblem"-এই পত্রে তিনি তার আবিষ্কার "টুরিং মেশিন" এর কথা উল্লেখ করেন । যার মাধ্যমে গণনা এবং এলগরিদমের ধারণার লিখিত-মৌখিক থেকে যান্ত্রিক পদ্ধতি প্রচলন করেন । এলগরিদমের উপর তার প্রতিভা ছিলো আকাশ চুমি ।
|
চিত্রঃ অমর প্রোগ্রামার এলেন |
তিনি তার তৈরী মেশিনের দ্বারা প্রমাণ করেন যে, "সাধারণ এলগরিদমের মাধ্যমে "
এ্যানসিডোংস প্রোব্লেম" এর গাণিতিক জটিলতা সমাধান সম্ভব নয় । এর সমাধানের বিকল্প হিসেবে তিনি সামগ্রীক ভাবে এলগরিদম ভিক্তিক যন্ত্র মাধ্যমে সম্ভব বলে উল্লেখ করেন " । অর্থ্যাৎ, টুরিং মেশিন কখনো হল্ট করবে কিনা তা অসংজ্ঞায়িত । তিনি "হল্টিং প্রব্লেম" নেপথ্যে
এ্যানসিডোংস প্রোব্লেম এর সুস্থিত অসম্ভাভ্য প্রমাণ দেখান । এই তত্ত্বটি
চার্চ-টুরিং থিসিস নামে পরিচিত ।
এন্সিডোংস প্রোব্লেমঃ ১৯২৮ সালে ডেভিড হেলবার্ট কর্তৃক এই চ্যানেঞ্জ প্রযোজিত হয় । যার মূল বিষয়বস্তু হল সিদ্ধান্ত গ্রহণে হিসাবিয় সিম্বল মেনিপুলেশন এবং গাণিতিক সঠিক মান নির্ধারণে এর এলগরিদম ভিক্তিক জটিলতা । যা ডেভিড হেলবার্ট ১৯২৮ সালে আন্তর্জাতিক কনভেন্সে অসমাধান যোগ্য সমস্যা বলে চিহ্নিত করেন ।( বাংলায় যেমন বলা হয়, ডিম আগে না মুরগি আগে । )
হল্টিং প্রোব্লেমঃ এটি হলো এমন এক ধরণের সমস্যা যেখানে প্রোগ্রাম ইনফিনিট লোপ এবং ব্রেক আপ বা হল্ট অসংজ্ঞায়িত হয়ে থাকে । যেমন,
সুডোকোড প্রোগ্রামঃ
while (true) continue ;
//এটি একটি আন হল্ট প্রোগ্রাম অর্থ্যাৎ, ইনফিনিট লোপ । আর যেমন,
print "Hello world!";
//এটি একটি হল্ট প্রোগ্রাম ।
|
চিত্রঃ বেলেচি পার্কে এলেন টুনিং এর লক্ষ ওয়েলস টাইসের স্তম্ভ |
এই ব্যক্তি কম্পিউটার জগতে অসামান্য কৃতিত্ত রাখেন । ১৯৪৮ সালে তিনি ম্যাঞ্চেস্টার ইউনিভার্সিটিতে ম্যাক্স নিউম্যানের কম্পিউটিং ল্যাবরেটরিতে যোগ দেন যেখানে তিনি "ম্যাঞ্চেস্টার কম্পিউটার" তৈরিতে সাহায্য করেন। এসময় তিনি গাণিতিক জীববিজ্ঞান সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরে তিনি মর্ফোজেনেসিসের রাসায়নিক ভিত্তির উপর গবেষণাপত্র লিখেন এবং স্পন্দিত রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্বন্ধে ধারণা পোষণ করেন যা প্রথম লক্ষ্য করা হয় ১৯৬০ সালে।
|
চিত্রঃ আলেন টুরিং স্মৃতি স্তম্ভ |
এরপর তিনি বায়োলজীর উপর উঠে পরে লাগেন । "
The Chemical Basis of Morphogenesis" নামে তিনি ১৯৫২ একটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন । তিনি "মর্ফোজেনেসিস"-বায়োলজীক্যাল অরগানিজমের উপর আগ্রহী ছিলেন । গবেষণার তাগিদে তিনি সমকামিতার বিভিন্ন পরীক্ষায় কাজ চালান । তার গবেষণা থেকেই সমকামী মন মানষিকতার সৃষ্টি হয়ে যায় । যার কারণে ১৯৫২ সালে টুরিংকে সমকামিতার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সে সময়ে যুক্তরাজ্যে সমকামিতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হত ।
|
চিত্রঃ অবদানের ফ্লো |
১৯৫৪ সালে আইনানুযায়ী তাকে এস্ট্রোজেন (
oestrogen) ইঞ্জেকশন দেয়া হয় । টিউরিং ১৯৫৪ সালে ৪২ বছর বয়সে মারা যান । ২০০৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন টুরিংকে যে ক্ষতিকর চিকিৎসায় বাধ্য করা হয় তার জন্য দাপ্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
|
চিত্রঃ এলেন টুনিং |
পুরস্কার ও সম্মাননাঃ
- ২০১৩ সালে রাণী এলিজাবেথ তাঁকে মরণোত্তর ক্ষমা প্রদান করেন।
- ১৯৯১ সালে তাকে "রয়্যাল সোসাইটির ফেলো" নির্বাচিত করা হয় ।
- "অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার"- সম্মাননা ।
তার নামে বহু প্রতিষ্ঠান-পুরস্কারের নামকরণ করা হয় । যথা,
আর সর্বোচ্চ যে কম্পিউটার ভিক্তিক সম্মানটা রয়েছে সেটা তার নামেই । সেটার নাম "টিউরিং এওয়্যার্ড" ।
|
চিত্রঃ এলেন টুনিং সেঞ্চুরী ট্রপি |
এই সম্মানটি কম্পিউটারের নোবেল বলা হয় । এটি এন্ড টি বেল লেবরেটরীর প্রসিডিউর অরিয়েন্টেন্ড প্রোগ্রাম (C Programming) এর জনক ডেনিস রিচও এই সম্মাননা পেয়েছিলেন । নিচে এখনো পর্যন্ত বিজয়ীদের তালিকা দেয়া হলঃ
বিজয়ীদের তালিকাঃ
সময় | বিজয়ী | কী অবদানের জন্য পুরস্কার |
১৯৬৬ | অ্যালান পারলিস | অগ্রসর প্রোগ্রামিং কৌশলাদি এবং কম্পাইলার তৈরির ক্ষেত্রে প্রভাবের জন্য |
১৯৬৭ | মরিস ভিনসেন্ট উইলকিস | প্রফেসর উইল্ক্স এডস্যাক কম্পিউটারের পরিকল্পক ও নির্মাতা হিসেবে খ্যাত। এই কম্পিউটারেই প্রথম একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করা হয়। ১৯৪৯ সালে নির্মিত কম্পিউটারটিতে মার্কারি ডিলে লাইন মেমরি ব্যবহার করা হয়েছিল। এছাড়াও উইল্ক্স হুইলার ও গিলের সাথে একত্রে ১৯৫১ সালে Preparation of Programs for Electronic Digital Computers শীর্ষক একটি বই লেখেন। এই বইটিতেই প্রথম প্রোগ্রাম লাইব্রেরির ধারণা প্রথম উপস্থাপন করা হয়। |
১৯৬৮ | রিচার্ড হ্যামিং | সাংখ্যিক পদ্ধতি, স্বয়ংক্রিয় কোডিং ব্যবস্থা, এবং ত্রুটি-শনাক্তকারী ও ত্রুটি-নিবারণকারী কোডের উপর তাঁর কাজের জন্য। (হ্যামিং কোড) |
১৯৬৯ | মার্ভিন মিন্সকি | কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা । |
১৯৭০ | জেমস উইল্কিন্সন | উচ্চ গতিসম্পন্ন আধুনিক কম্পিউটারের সাঙ্খিক হিসাব পর্যবেক্ষণের জন্য । লিনিয়ার এলজাবরা এবং "ব্যাকওয়ার্ড" ত্রুটি বিশ্লেষণে জন্য । |
১৯৭১ | জন ম্যাকার্থি | "আর্টিফিশিয়াল ইন্ট্যালিজেন্ট" এর বর্তমান অবস্থাননের উপর ভিক্তি করে যুক্তি যুক্ত তথ্য পরিবেশনের জন্য । |
১৯৭২ | এট্সখার ডেইক্স্ট্রা | এট্সখার ডেইক্স্ট্রা ১৯৫০-এর দশকে উচ্চস্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা অ্যালগল নির্মাণে একজন প্রধান অবদানকারী ছিলেন। অ্যালগল ভাষাটি পরিচ্ছন্নতা এবং গাণিতিক বিধিবদ্ধতার একটি মডেল হিসেবে পরিগণিত হয়। ডেইকস্ট্রা প্রোগ্রামিং ভাষাসমূহের বিজ্ঞান ও শিল্পের একজন প্রধান প্রবক্তা; তিনি প্রোগ্রামিং ভাষাসমূহের গঠন, উপস্থাপন এবং বাস্তবায়ন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের পরিসর বৃদ্ধি করেছেন। প্রোগ্রামিং ভাষার ক্ষেত্রে তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে লেখেন, যাতে তাত্ত্বিক গবেষণাপত্র থেকে শুরু করে সাধারণ ম্যানুয়াল, বড় রচনা, এবং দার্শনিক চিন্তা স্থান পেয়েছে। |
১৯৭৩ | চার্লস বাখমান | ডেটাবেজ প্রযুক্তিতে অসামান্য অবদান রাখার জন্য |
১৯৭৪ | ডোনাল্ড কানুথ | অ্যালগোরিদমসমূহের বিশ্লেষণ এবং প্রোগ্রামিং ভাষার ডিজাইনে ব্যাপক অবদান রাখার জন্য, বিশেষ করে দি আর্ট অভ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিরোনামের বইয়ের সিরিজটি লেখার জন্য। |
১৯১২ সালের ২৩ শে জুনে অর্থ্যাৎ আজকের এই দিনে এই ব্যক্তি লন্ডনের মাইদাভলে জন্মগ্রহণ করেন । ব্রিটিশ ভারতের বিহার এবং উড়িষ্যা প্রদেশে তাদের ছিলো আদি নিবাস ।
1 মন্তব্য(গুলি)
টুরিং পুরস্কার (Turing Award)- কম্পিউটার সাইন্সের সর্বোচ্চ সম্মাননা - সুর মডিফায়ার >>>>> Download Now
Reply>>>>> Download Full
টুরিং পুরস্কার (Turing Award)- কম্পিউটার সাইন্সের সর্বোচ্চ সম্মাননা - সুর মডিফায়ার >>>>> Download LINK
>>>>> Download Now
টুরিং পুরস্কার (Turing Award)- কম্পিউটার সাইন্সের সর্বোচ্চ সম্মাননা - সুর মডিফায়ার >>>>> Download Full
>>>>> Download LINK qd